আয়রন এর কাজ কি? আয়রন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ পদার্থ। আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে এক প্রকার প্রোটিন থাকে যাকে আমরা হিমোগ্লোবিন বলে থাকি। আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সাহায্য করে এবং সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
আমাদের রক্তের মধ্যে থাকা হিমোগ্লোবিন এর সাহায্যে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হয়।আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়রন কে উৎপন্ন করতে পারে না বিভিন্ন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তাই আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমতে থাকে এবং আমাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া অথবা রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার নিয়ে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এর তালিকা :
সাধারণত আমরা যে খাদ্যগুলির মধ্যে আয়রন পেয়ে থাকি তাদের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রথমটি হেম আয়রন যা আমরা সাধারণত প্রাণী জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে পেয়ে থাকি যেরকম ডিম, বিভিন্ন প্রকার মাংস, বিভিন্ন প্রকার মাছ ইত্যাদি।
দ্বিতীয়টি নন-হেম আয়রন যা আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে পেয়ে থাকি যেরকম বিভিন্ন প্রকার বাদাম, শস্য দানা, শাকসবজি ইত্যাদি।
আমাদের শরীর নন-হেম আয়রনকে খুব সহজে শোষণ করতে পারে এবং কিছু প্রাণী আছে যাদের থেকে আমরা নন-হেম আয়রন পেয়ে থাকি যদিও এটি একটি বিতর্কিত বিষয়।
আয়রন সমৃদ্ধ সবজি :
- পালং শাক
- মিষ্টি আলু
- ব্রকলি
- মটরশুটি
- বিনস
আয়রন সমৃদ্ধ ফল :
- খেজুর
- তরমুজ
- স্ট্রবেরি
- ডুমুর ফল ইত্যাদি।
আয়রন সমৃদ্ধ শুষ্ক খাবার অথবা ড্রাই ফ্রুটস :
- বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেরকম আলমন্ড, কাজু, আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি।
আয়রন সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার :
- বিভিন্ন প্রকার ডাল যে রকম মুগ ডাল, মসুর ডাল, ছোলার ডাল ইত্যাদি।
- ওটস এবং ব্রাউন রাইস
- বিভিন্ন প্রকার মাংস
- বিভিন্ন প্রকার মাছ
- বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত বা লিভার
- ডিম
- পাউরুটি অথবা ব্রেড ইত্যাদি।
দিনে কতটুকু আয়রন প্রয়োজন ?
প্রতিদিন কতটা আয়রন গ্রহণ করা উচিত সেটি নির্ভর করে আমাদের বয়স এবং শারীরিক অবস্থার উপর।
- সাধারনত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার (১৮ থেকে ৫০ বছর) প্রতিদিন ১৮ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের (১৮ থেকে ৫০ বছর) প্রতিদিন ৮ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন।
- একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৫ থেকে ২৭ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত ৯ টি তথ্য।
আয়রন এর উপকারিতা ?
- আয়রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ উপাদান। যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।এই হিমোগ্লোবিন একপ্রকার প্রোটিন যা আমাদের রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় অবস্থিত। লোহিত রক্তকণিকা সাহায্য করে আমাদের শরীরে অবস্থিত প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছে দিতে।
- একটি গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয় নিজের জন্য এবং তার গর্ভে অবস্থিত সন্তানের জন্য। তাই ওই সময় অনেক বেশি আয়রনের প্রয়োজন হয় শরীরে যার ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন সন্তানের শরীরে পৌঁছাতে পারে।
- একজন ছয় থেকে নয় মাসের শিশুর জন্য আয়রনের বিশেষ প্রয়োজন হয়। তার কারণ ওই বয়সে শিশুদের গ্রোথ বা শারীরিক উন্নতি খুব তাড়াতাড়ি হয়। পর্যাপ্ত পরিমানে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীরের প্রতিটি অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রেশন পৌঁছাতে পারে লোহিত রক্ত কণিকার মাধ্যমে। শুধু তাই নয় একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য আয়রনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- আয়রন সাহায্য করে আমাদের শরীরের মাংসপেশী গুলিতে এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে যার ফলে আমাদের শরীরের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- প্রতিদিন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকে। আয়রন সাহায্য করে বিষাক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থ গুলিকে শরীর থেকে বাইরে বের করে দিতে। আয়রন সাহায্য করে আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়তে। তাই নিয়মিত আয়রন গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয়।
- আমাদের জন্য সঠিক পরিমাণ ঘুম বা নিদ্রা খুবই প্রয়োজন। আয়রন সাহায্য করে আমাদের সার্কাডিয়ান রিদম বা ছন্দকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যার ফলে আমাদের ঘুম অনেক গভীর এবং উন্নত মানের হয়। এমনকি আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে আমাদের অনিদ্রার সমস্যা হয় না।
- যারা নিয়মিত কোন খেলার সাথে যুক্ত আছে অথবা অ্যাথলেটিক বা ক্রীড়াবিদ বিশেষ ব্যক্তিদের অনেক বেশি পরিমাণ শারীরিক কার্যকারিতার জন্য তাদের মধ্যে আয়রনের অভাব দেখা দেয় বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে। তাই নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে তাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয় ক্রীড়াবিদদের সাধারণত ১০ মিলিগ্রামের বেশি আয়রন প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত তাদের শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য।
আয়রনের অভাবে কি রোগ হয় ?
- আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব হলে আমাদের লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক একপ্রকার প্রোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপন্ন হয় না। যার ফলে আমাদের শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয় যাকে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা বলে।
- যদি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় আয়রনের অভাবে তাহলে আমাদের শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না যার ফলে আমাদের শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে।
- আয়রন জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত প্রতিটি ফলিকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে না এবং ফলস্বরূপ আমাদের চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- আয়রনের অভাবে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের হার কমতে থাকে যার ফলে আমাদের মাথা যন্ত্রণা এবং মাথা ঘোরানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দেয় যার ফলে আমাদের শরীরের রং দিন প্রতিদিন ফ্যাকাসে হতে থাকে।
- আমারা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন না গ্রহণ করি তাহলে আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন নিয়ন্ত্রনে থাকে না যার ফলে আমাদের হৃদয় সংঘটিত রোগ হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- আয়রনের অভাবে আমাদের জিহ্বার উপর নানান রকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় আমাদের জিহ্বা ফুলে ওঠে এবং ব্যথা বা যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিন আমাদের লোহিত রক্ত কণিকায় না থাকলে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি এবং পরিমাণ কমতে থাকে যার ফলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না।
শরীরে আয়রন বেশি হলে কি হয় ?
ফেরিটিন একপ্রকার প্রোটিন যার মধ্যে আমাদের শরীর আয়রন সঞ্চয় করে রাখে এবং প্রয়োজনে ব্যবহার করে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ৬০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম আয়রন সঞ্চয় থাকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার জন্য ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম আয়রন সঞ্চয় থাকে।
যদি কোন কারণবশত আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ বাড়তে থাকে তাহলে সেটিকে হেমোক্রোমাটোসিস বলা হয়। অত্যধিক পরিমাণ আয়রন আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয় এবং তার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে নানান রকমের রোগ বা সমস্যা দেখা দেয় যেরকম,
- হাঁটু, কোমর এবং ঘাড়ে ব্যথা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পেটে ব্যথা এবং বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মাথা যন্ত্রণা, মাথা ঘুরানো এবং স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
- শারীরিক দুর্বলতা এবং অলসতা বৃদ্ধি পায়।
- হৃদয় এবং যকৃত বা লিভার সংক্রান্ত রোগ হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : সুপারফুড কি? সুপারফুড সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা তথ্য।
আয়রন কম হওয়ার কারণ কি ?
- আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়রন উৎপন্ন করতে পারে না বিভিন্ন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ না গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে আয়রন এর অভাব দেখা দেয়।
- আমাদের শরীরে আয়রন শোষণ করতে ভিটামিন C এর প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের শরীরে আয়রন শোষণের পরিমাণ কমতে থাকে যার ফলে আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে।
- কোন দুর্ঘটনায় বা শারীরিক কারণবশত আমাদের শরীর থেকে ক্রমাগত রক্ত ক্ষয় হলে আমাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম থাকে এবং আমরা জানি আমাদের শরীরে বেশিরভাগ আয়রন আমাদের রক্তে থাকে। তাই রক্তক্ষয় হলে আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ অনেক কমে যায়।
- গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর পরিমাণ আয়রনের প্রয়োজন হয় তার কারণ ওই সময় মায়েদের প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন যার সাহায্যে গর্ভে অবস্থিত সন্তান এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারা সম্ভব হয়। তাই গর্ভবতী অবস্থায় আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হয় ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : বয়স ক্যালকুলেটর বা Age Calculator – Healthy Bangla.
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত খাদ্য গুলি গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com