অ্যালোভেরা যার বাংলা অর্থ ঘৃতকুমারী, এই গাছটি আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন অংশে পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা গাছ সম্পর্কে আমরা কম-বেশি অবগত তবে আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
বহু যুগ ধরে অ্যালোভেরা গাছকে আমরা ভেষজ উদ্ভিদ রূপে ব্যবহার করে চলেছি। অ্যালোভেরা গাছের পাতা থেকে যে জেল নিঃসরণ করা হয় তা আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ঔষধিক গুণের জন্য ব্যবহার করে থাকি।
অ্যালোভেরার উপকারিতা :
এখনকার দিনে অ্যালোভেরার ব্যবহার খুব বেশি প্রচলিত তার দুইটি কারণ,
- প্রথমত, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছকে খুব সহজে বাজার বা মার্কেটে পাওয়া যায় যার বাজার মূল্য অনেক কম অথবা আমাদের বাড়িতে যে কোন একটি পাত্রের মধ্যে অ্যালোভেরা গাছকে খুব সহজেই বড় করা যায়।
- দ্বিতীয়ত, অ্যালোভেরা গাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ বা নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট,
- ভিটামিন A, B১২, C এবং ভিটামিন E,
- ক্যালসিয়াম, কপার, সিলোনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক,
- অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং স্যালিসিলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
- অ্যালোভেরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্লান্ট কেমিক্যাল পাওয়া যায় যেরকম পলিফেনাল যা আমাদের শরীরে এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রুপে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি আমাদের শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল কে কম করতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হবার প্রবণতা কমে যায়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর কারনে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমাদের হৃদয় ঘটিত রোগ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ওই জাতীয় রোগ হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- অ্যালোভেরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। ওই উপাদানগুলি আমাদেরকে সাহায্য করে বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যালোভেরা গ্রহণ করলে আমাদের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে কোনরকম সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- অ্যালোভেরা জেল এর উপকারিতা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরা জেল এর মধ্যে কিছু অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে। যদি কোন কারনে আমাদের ত্বকের কোন অংশ পুড়ে যায় আগুনে বা কোন আঘাতে ক্ষতস্থান হয় তাহলে সেখানে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। যার ফলে অ্যালোভেরা তে অবস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান ওই ক্ষতস্থানের ব্যথা বা যন্ত্রণা কে কম করতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান ওই স্থানে কোন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতাকে কম করতে সাহায্য করে।
- অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের মুখের ভেতরের অংশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ অনেক সময় আমাদের মুখের ভেতরের অংশে নানান প্রকারের ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দেয় যার ফলে আমাদের কথা বলতে কষ্ট হয়, কোন খাবার খেতে কষ্ট হয়, দাঁতের মাড়ি সংলগ্ন অংশে ব্যথা এবং যন্ত্রণা হয়। অ্যালোভেরার মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ওই সংক্রমণ বা ইনফেকশন হবার প্রবণতাকে কম করতে পারে। শুধু তাই নয় নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মুখের দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- অ্যালোভেরার মধ্যে অ্যানথ্রাকুইনোন গ্লাইকোসাইড নামক এক প্রকার উপাদান থাকে। আর এই উপাদান আমাদেরকে সাহায্য করে, কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে রক্ষা করতে। শুধু তাই নয় নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেক উন্নত হয়।
- অ্যালোভেরা জেল এর উপকারিতা আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরা জেল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-মাইক্রোবল উপাদান থাকে। যা আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প বিভিন্ন সংক্রমন বা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে আমাদের চুলে খুশকি হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় বিভিন্ন পরজীবী থেকে আমাদের চুলকে রক্ষা করে তাই নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- অত্যাধিক সূর্যের তাপ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেশিদিন কাজ করলে বা থাকলে আমাদের ত্বকের উপর বিভিন্ন রকম সংক্রমণ বা সমস্যা দেখা দিতে পারে যেরকম, ত্বকের রং কালো হয়ে যাওয়া, ত্বক অনেক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়া, ত্বক মাঝখান থেকে ফেটে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল আমাদের ত্বকের উপর সরাসরি ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তার কারণ অ্যালোভেরার মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বককে বিভিন্ন ক্ষতির দিক থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- অ্যালোভেরা নিয়মিত গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের শরীরের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটি অনেক বেড়ে যায় যার ফলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিস হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- অনেক সময় আমাদের মধ্যে পেটে ব্যথা, বমি ভাব, শরীরে রক্তের অভাব ইত্যাদি দেখা দেয় বিভিন্ন পরজীবী বা কৃমির জন্য। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত ভাবে অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করে থাকি তাহলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় তার কারণ অ্যালোভেরার মধ্যে কিছু প্লান্ট কেমিক্যাল পাওয়া যায় যা আমাদের পেটের মধ্যে অবস্থিত কৃমি বা পরজীবী গুলিকে খুব সহজে বিনাশ করতে পারে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চিয়া বীজের উপকারিতা সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ৮ টি তথ্য।
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার :
আমরা আমাদের বাড়িতে খুব সহজেই অ্যালোভেরা গাছ বড় করে তুলতে পারি অথবা বাজার বা মার্কেট থেকে অ্যালোভেরা গাছ সংগ্রহ করতে পারি। সাধারণ অ্যালোভেরা গাছের পাতাগুলিকে সংগ্রহ করে সতর্কতার সাথে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিতে পারি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারি।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার :
সংগ্রহ করা অ্যালোভেরা পাতার উপরের আবরণ কে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ভেতরে জেল কে চামচের সাথে একটি পাত্রের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। এরপর দুই চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে তিন চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর ওই মিশ্রণ দুই থেকে তিন ঘন্টার জন্য আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে এবং তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। প্রতি সপ্তায় দুইদিন আমরা অ্যালোভেরা জেল আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহারের নিয়ম :
অ্যালোভেরা জেল কে পাতা থেকে একটি পাত্রে সংগ্রহ করার পর সরাসরি আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করতে পারি ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য তারপর একটি জৈব সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করে আমাদের ত্বককে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ঠিক একইভাবে আমরা অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের করতে পারি। তবে একটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন কিছু মানুষ আছেন যাদের অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জির সমস্যা থাকতে পারে তাই তারা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করার পূর্বে সামান্য একটু জেল ব্যবহার করে পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।
অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম :
অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে, দুই চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক গ্লাস পরিশ্রুত জলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে সকালে খাদ্য গ্রহণের এক ঘন্টা পূর্বে অথবা খাদ্য গ্রহণের এক ঘন্টা পরে গ্রহণ করতে পারি প্রতি সপ্তাহে দুই দিন। আমরা চাইলে সেই মিশ্রণের মধ্যে পাতি লেবু অথবা বিভিন্ন ফলের রস ব্যবহার করতে পারি ভালো স্বাদের জন্য।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : স্পিরুলিনার উপকারিতা সম্পর্কে ১০ টি বিস্ময়কর তথ্য।
অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা :
- অ্যালোভেরা পাতার মধ্যে ল্যাটেক্স নামক এক প্রকার উপাদান পাওয়া যায় যা অনেক মানুষের অ্যালার্জির কারণ। তাই এরকম প্রচুর মানুষ থাকতে পারে যাদের অ্যালোভেরা জেল খেলে বা ত্বকের উপর ব্যবহার করলে বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে এবং তাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- অ্যালোভেরার মধ্যে বায়ো অ্যাকটিভ কমপাউন্ড পাওয়া যায় যা সাহায্য করে আমাদের যকৃত কে ডিটক্সিফিকেশন করতে। তাই খুব বেশি অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করলে আমাদের মধ্যে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
- অ্যালোভেরার মধ্যে প্লান্ট কেমিক্যাল পাওয়া যায়। তাই বলা হয় ১২ বছরের ছোট বাচ্চাদের এবং গর্ভবতী মায়েদের অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করা বা খাওয়া উচিত না।
- আমরা জানি অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে সুগারে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু খুব বেশি পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে যা আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা ভালো নয়।
- অ্যালোভেরা জেল খুব বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার ফলে আমাদের হৃদয়ে অনিয়মিত স্পন্দন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীকালে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করার পূর্বে এবং ত্বকে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com