রাতে ঘুম না আসার কারণ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ১১ টি তথ্য

Share With Your Friends

রাতে ঘুম না আসার কারণ

 

রাতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয় তাহলে পরবর্তী দিন আমাদের খুবই অসুবিধার মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে দিনের বেলা তন্দ্রা এবং অলসতা বেড়ে যায়। কোন একটি নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগের অভাব হয়, এমনকি আমাদের মধ্যে মাথা যন্ত্রণা এবং শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়। 

তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমরা চেষ্টা করি সঠিক সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট কারণের জন্য আমাদের ঘুম আসে না এবং রাতের অনেকটা সময় আমাদের অনিদ্রার মধ্যে দিয়ে কাটে। যার দীর্ঘদিনের ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি হয়। 

ঘুম আসে না কেন? এটি এখনকার দিনে খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন। আমাদের সঠিক ধারণা থাকা উচিত, ঘুম না আসার কারণ গুলি সম্পর্কে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। 

 

রাতে ঘুম না আসার কারণ কি ? 

অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম : 

আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য অত্যাধিক পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করি, তাহলে আমাদের অত্যাধিক শারীরিক পরিশ্রমের জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বা যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে। যেরকম পায়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ব্যথা যা আমাদের ঘুম না আসার কারণ। 

 

অত্যধিক মানসিক  দুশ্চিন্তা : 

যত আমাদের বয়স বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আমাদের চরিত্র কিছুটা নির্ভর করে সামাজিক আচরণের উপর, পরিবার এবং প্রিয় বন্ধুদের সাথে ব্যবহারের উপর। ঠিক এই ভাবেই আমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন হয় প্রিয় মানুষগুলির সাথে। 

যখনই আমাদের মধ্যে অত্যাধিক পড়াশোনার চাপ, দায়িত্ব ও কর্তব্য, এবং প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সম্পর্কের বিবাদ বা বিচ্ছেদ ঘটে তখনই আমাদের মধ্যে অত্যাধিক পরিমাণ মানসিক দুশ্চিন্তা দেখা দেয় যা আমাদের ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। 

 

ঘুমের পূর্বে কিছু খারাপ অভ্যাস : 

প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার পূর্বে তীব্র নীল আলোক রশ্মি আমাদের চোখে এসে পড়লে আমাদের ঘুম আসার প্রবণতা অনেক কমে যায়। এই তীব্র নীল আলোক রশ্মি যতটা আমাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর ততটাই ক্ষতিকর আমাদের ঘুমের জন্য। 

বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস থেকে এই তীব্র নীল আলোক রশ্মি নির্গত হয় যেরকম, মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন ইত্যাদি। ঘুমাতে যাবার পূর্বে এই যন্ত্রাংশ গুলির ব্যবহার আমাদের ঘুম না আসার কারণ। তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে এক ঘন্টা পূর্বে ওই যন্ত্রাংশ গুলি ব্যবহার করা উচিত না।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় সম্পর্কে চমৎকার ৭ টি তথ্য

 

সঠিক সময় খাদ্য না গ্রহণ করা : 

অনেক সময় আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে অনেক বেশি রাত হয়ে যায়, আমাদের পড়াশোনার জন্য বা কর্মক্ষেত্রের জন্য। যা পরবর্তীকালে আমাদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। অনেক বেশি রাতে খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের ঘুম এবং শরীরের জন্য খুব একটা ভালো নয়।

তার কারণ খাদ্য গ্রহণের পর আমাদের কিছুটা সময় লাগে সেই খাদ্য পচনে। কিন্তু আমরা যদি খাদ্য গ্রহণের পর দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের মধ্যে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে আমাদের অস্বস্তিকর অনুভব হয় যা আমাদের দ্রুত ঘুম না আসার কারণ। তাই আমাদের ঘুমের অন্ততপক্ষে এক থেকে দুই ঘন্টা পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ রাতের খাদ্য গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। 

 

ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ :

আমাদের ঘুমানোর জন্য সঠিক পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শয্যা বা বিছানা রাখা উচিত। ঘর বা রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত পাখা বা ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদি ব্যবহার করে। ঘর বা রুমের আলো কে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া উচিত যার ফলে আমাদের দ্রুত ঘুম আসার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। তাই ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ না তৈরি করা ঘুম না আসার কারণ। 

 

ক্যাফাইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণ : 

ঘুমোতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে দু ঘন্টা পূর্বে ক্যাফাইন জাতীয় দ্রব্য পান করা উচিত নয় যেরকম কফি, লিকার চা ইত্যাদি। তার কারণ ক্যাফাইন আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যার ফলে ঘুম আসার প্রবণতাকে অনেক কম করে দেয়। তাই ঘুমোতে যাওয়ার দুই ঘন্টা পূর্বে ক্যাফাইন গ্রহণ আমাদের ঘুম না আসার কারণ। 

এছাড়াও বিভিন্ন তামাক জাতীয় দ্রব্য এবং অ্যালকোহল আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ খারাপ। ওই জাতীয় দ্রব্য পান করলে আমাদের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় যার ফলে দিন প্রতিদিন আমাদের ঘুম আসার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 

 

শারীরিক অসুস্থতা : 

বিভিন্ন কারণের জন্য আমাদের মধ্যে নানান রকমের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় যেরকম, হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার, হাই ব্লাড সুগার, অ্যাস্থমা ইত্যাদি । এই রোগ গুলি কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের বিভিন্ন প্রকার মেডিসিন বা ঔষধ গ্রহণ করতে হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। 

অনেক সময় এই রোগ গুলি এবং অনিয়মিত মেডিসিন বা ঔষধ গ্রহণ করার ফলে আমাদের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং যা আমাদের রাতে ঘুম না আসার কারণ। 

 

ঘুমের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ : 

বিভিন্ন কাজের জন্য অথবা পড়াশোনার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট সময় ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকে না। অনির্দিষ্ট সময় ঘুমানোর অভ্যাস আমাদের ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। 

কোন একটি কাজের জন্য কোন একদিন আমাদের ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে যায় আবার খুব তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করায় সঠিক সময়ের পূর্বে আমারা ঘুমাতে চেষ্টা করি। তারপরে আমাদের ঘুমের জন্য কোন সঠিক এবং নির্ধারিত সময় থাকে না যার ফলে আমাদের ঘুমের সমস্যা হয়। তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত প্রতিদিন একটি নির্ধারিত সময় ঘুমানোর অভ্যাস করতে।

 

বয়স অনুযায়ী ঘুমের তালিকা :

একটি মানুষ প্রতিদিন কতটা ঘুমাবে তা কিছুটা নির্ভর করে তার শারীরিক অবস্থার উপর যেরকম, কেউ যদি খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে তার ঘুমের পরিমাণ একটু বেড়ে যায়, আবার খুব বেশি অসুস্থতার কারণে ঘুমের পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি হয়। বয়স অনুযায়ী ঘুমের তালিকা সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা দেওয়া হল,

  •  নবজাতক  শিশুর (০ থেকে ৩ মাস) প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। 
  • ৪ থেকে ১২ মাস শিশুর প্রতিদিন ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। 
  • ১ থেকে ২ বছরের শিশুর প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। 
  • ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুর প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।
  • ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুর প্রতিদিন ৯ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। 
  • ১৩ থেকে ১৮ বছরের কিশোর বা কিশোরীর জন্য ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। 
  • ১৮ থেকে ৬০ বছরের পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। 
  • ৬০ থেকে পূর্ণবয়স পর্যন্ত পুরুষ এবং মহিলাদের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানা আছে তো?

 

রাতে ঘুম না হলে কি করনীয় ? 

আমারা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম এবং সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় সম্পর্কে অবগত হতে পারি। 

  • ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে শিথিল এবং ঘুম আসার প্রবণতা বৃদ্ধি করা। 
  • ঘর বা রুমকে অন্ধকার করে আমাদের মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানো, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য। 
  • প্রশ্বাস এবং নিঃশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়া পদ্ধতিটি অবলম্বন করে। 
  • ঘুমানোর জন্য সঠিক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করে। 
  • বাহ্যিক শব্দকে নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় অবলম্বন করে। 
  • দৈনিক ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা এক্সাইজের মাধ্যমে। 
  • সঠিক এবং নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ঘুমিয়ে পড়ার উপায় অবলম্বন করে। 

 

কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় ? 

ভিটামিন ডি এর উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি সাহায্য করে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে। ঠিক একই রকম ভিটামিন ডি সাহায্য করে, মেলাটোনিন নামক একপ্রকার হরমোন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এই মেলাটোনিন নামক হরমোনটির কারনে আমাদের ঘুম হয়। তাই আমরা এটা বলতেই পারি ভিটামিন ডি পরোক্ষভাবে আমাদের ঘুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন। ভিটামিন ডি এর অভাবে ঘুম কম হয় এবং ইনসোমেনিয়া বা স্লিপ ডিসঅর্ডার হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। 

 

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment