এখনকার দিনে আমাদের কাছে সময়ের খুবই অভাব তাই আমরা সঠিকভাবে আমাদের চুলের পরিচর্যা করে ওঠার সময় এবং সুযোগ পাই না। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীকালে আমাদের চুল সম্পর্কিত নানান সমস্যায় পড়তে হয়। যেরকম চুল উঠে যাওয়া, চুলে খুশকি হওয়া এবং অল্প বয়সে বেশিরভাগ চুল পেকে যাওয়া ইত্যাদি।
আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও আমাদের চুলের সঠিকভাবে পরিচর্যা করা। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় গুলি সম্পর্কে।
আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলি থেকে আমাদের চুল উৎপন্ন হয়। কেরাটিন নামক এক প্রকার প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের চুল গঠন করতে এবং বায়োটিন নামক এক প্রকার ভিটামিন সাহায্য করে আমাদের চুলকে বৃদ্ধি করতে এবং চুলকে পুনরায় সুস্থ রাখতে। তাই চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তর আলোচনায় শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে কোন দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে চুলকে সুগঠিত এবং উজ্জ্বল করা যায় না, আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ভীষণভাবে প্রয়োজন।
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় কি?
চুলে নিয়মিত তেলের ব্যবহার :
নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার আমরা আমাদের চুলে তেল ব্যবহার করতে পারি। নিয়মিত আমাদের চুলে তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক বেশি শক্ত হয় এবং চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। চুলে তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুলে কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
তেলের ব্যবহার আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প কে অনেক সুস্থ রাখে যার ফলে নতুন চুল গজানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। চুলে ব্যবহারের জন্য সবথেকে ভালো তেল গুলির মধ্যে নারকেল তেল, আলমন্ড অয়েল অথবা বাদাম যুক্ত তেল, অনিয়ন অয়েল অথবা পেঁয়াজ যুক্ত তেল, ক্যাস্টর অয়েল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনায়, চুলে নিয়মিত তেলের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন চুল ধুয়ে নেওয়া :
দৈনন্দিন কাজের জন্য বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিনিয়ত আমাদের কাজ করতে হয় যার ফলে আমাদের চুল অনেক বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিন আমাদের চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া উচিত যাতে চুলের গোড়াতে কোনরকম ময়লা অথবা দূষিত পদার্থ না লেগে থাকে।
রাসায়নিক মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার :
নিয়মিত আমাদের চুলে শ্যাম্পু এর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প অনেক পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন থাকে, যার ফলে আমাদের চুলের গোড়া তে কোনরকম নোংরা জমতে পারে না এবং মাথার ত্বকে ইনফেকশন অথবা সংক্রমণ হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
আমাদের চুলে শ্যাম্পু এর ব্যবহার চুলে খুশকি হওয়া, চুল সহজে ভেঙে যাওয়া এবং চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতাকে অনেক কমিয়ে দেয়। তবে একটি কথা আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে শ্যাম্পু গুলিতে কেমিক্যাল অথবা রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি সেগুলি আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলির জন্য খুবই ক্ষতিকারক। মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের চুলে নানান রকম সমস্যা দেখা দেয় যেরকম, চুল উঠে যাওয়া, নতুন চুল না গজানো এবং চুলের বৃদ্ধি না হওয়া ইত্যাদি।
তাই অত্যাধিক রাসায়নিক বা কেমিকেলস যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আমাদের চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের উচিত জৈব বা অর্গানিক শ্যাম্পু আমাদের চুলে ব্যবহার করা। যেরকম অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, অনিয়ন শ্যাম্পু, নিম শ্যাম্পু ইত্যাদি। তাই নিয়মিত জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার আমাদের চুলের যত্ন নেওয়ার মুখ্য উপায়।
প্রাকৃতিক উপায় চুলকে শুষ্ক এবং সোজা করা :
আমরা জানি চুলকে বেশিক্ষণ ভেজা অবস্থায় রাখলে আমাদের শরীর খারাপ হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই আমরা সব সময় তাপ উৎপন্নকারী যন্ত্রাংশ বা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে আমাদের চুলকে শুকিয়ে নিয়ে থাকি। কিন্তু তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্র আমাদের চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক তার কারণ তাপ উৎপন্নকারী যন্ত্র গুলি আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল এর কার্যকারিতা অনেক কম করে দেয়।
ঠিক একইভাবে আমাদের চুলকে সোজা করার জন্য আমরা হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করে থাকি যা আমাদের চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই আমাদের উচিত প্রাকৃতিকভাবে আমাদের চুলকে সোজা করতে এবং শুকিয়ে নিতে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল লম্বা না হওয়ার কারণ কি? এক্ষুনি জেনে নিন ৯ টি তথ্য।
নিয়মিত চুল কাটা :
আমরা দেখেছি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের চুল আর বৃদ্ধি পায় না তার কারণ বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত চলতে হয়। যার ফলে আমাদের চুলের অগ্রভাগ ভেঙ্গে যায় অথবা বিভক্ত হয়ে যায় এবং এটি আমাদের চুল লম্বা না হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই আমাদের উচিত প্রতি এক থেকে দুই মাস অন্তর চুলের অগ্রভাগ সামান্য কেটে দেওয়া। তাই নিয়মিত চুল কাটা আমাদের চুলের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায়।
অর্গানিক অথবা জৈব দ্রব্যের ব্যবহার :
আমরা আমাদের চুলে বিভিন্ন জৈব দ্রব্য ব্যবহার করতে পারি যার ফলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প-এ কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় চুলে খুশকি হওয়া সমস্যারও সমাধান হয়ে যায়।
এই জৈব দ্রব্য গুলি ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয় এবং এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। শুধু তাই নয় এই দ্রব্য গুলির ব্যবহার আমাদের প্রাকৃতিকভাবে চুল সিল্কি করার অন্যতম উপায়।
দ্রব্য গুলি প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করতে পারি পরিবর্তন অথবা অল্টারনেটিভ উপায় যেরকম কোন একটি দ্রব্য মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যবহার করতে পারি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্য একটি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারি।
- প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন, দুই থেকে তিন চামচ পাতি লেবুর রসের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে সরাসরি প্রয়োগ করতে পারি।
- প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ডিমের সাদা অংশ সরাসরি আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি।
- প্রতি সপ্তাহে একদিন অর্গানিক হেনা আমাদের চুলে সরাসরি ব্যবহার করতে পারি।
- প্রতি সপ্তাহে একদিন অ্যালোভেরা জেল সরাসরি আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারে।
- প্রতি সপ্তাহে একদিন টক দই আমাদের চুলের প্রয়োগ করতে পারি।
তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি ব্যবহারের পর আমাদের চুলকে জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর আমরা চাইলে অর্গানিক কন্ডিশনার আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলির ব্যবহার, আমাদের চুলের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায়।
সঠিক খাদ্যের অভ্যাস :
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কিত আলোচনা আমাদের একটি কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের চুলকে সুস্থ রাখতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন সঠিক খাদ্যের অভ্যাসের। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছিলাম যে আমাদের চুলের জন্য প্রোটিন এবং বায়োটিন ভীষণ প্রয়োজনীয় দুইটি উপাদান।
তাই আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিন প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা। প্যাকেজ ফুড, ফাস্ট ফুড এছাড়া অত্যাধিক তেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের জন্য একদমই ঠিক নয়। তাই আমাদের চুলের যত্নের জন্য সঠিক খাদ্যের অভ্যাসের ভীষণ প্রয়োজন।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুলে কি দিলে চুল ভালো থাকে? জেনে নিন অবাক করা ৭ টি তথ্য।
সতর্কতা অবলম্বন :
আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন কাজের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে চলতে হয় এবং ওই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে আমাদের চুলে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের উচিত ওই সমস্ত পরিবেশে যাওয়ার পূর্বে আমাদের মাথার চুল গুলিকে একটি পাতলা আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখা।
আমরা জানি সূর্যের প্রখর রোদ আমাদের চুলের জন্য ভালো না তাই সূর্যের প্রখর রোদে আমাদের চুলকে রক্ষা করতে ছাতা অথবা টুপি ব্যবহার করা উচিত।
সেই সমস্ত পরিবেশে আমাদের চুল সবসময় বেঁধে রাখা উচিত যেখানে ধুলোবালির পরিমাণ অনেক বেশি এবং এই অত্যাধিক ধুলোবালি গুলি আমাদের চুলকে ভীষণভাবে ক্ষতি করে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত দ্রব্য গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন তার কারণ কিছু দ্রব্য কিছু মানুষের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com