আমাদের মধ্যে অনেকেরই ইচ্ছা থাকে লম্বা চুল করতে। কথিত আছে লম্বা চুল একটি নারী অথবা পুরুষকে আরো বেশি সুন্দর এবং সুদর্শন করে তোলে। তাই আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চুল লম্বা করার উপায় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করে চলেছি।
বিভিন্ন পণ্য বা প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের চুল লম্বা করা যায় তবে তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি প্রাকৃতিক ভাবে চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য নিয়ে আলোচনা করা।
চুল লম্বা করার উপায় কি ?
- নিয়মিত চুলে তেল দেওয়া খুবই প্রয়োজনীয় এবং তেল ব্যবহারের মাধ্যমে চুল লম্বা করা সম্ভব।চুল লম্বা করার উপায় হিসাবে তেলের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চুলে তেল দিলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল ঘন ও লম্বা হতে অনেক সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত চুলে তেল দিলে আমাদের স্কাল্প বা মাথার ত্বকে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং আমাদের স্কাল্প বা মাথার ত্বক অনেক ভালো থাকে। তাই নিয়মিত চুলে তেল দেওয়া আমাদের চুল লম্বা করার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি। আমরা চুলে বিভিন্ন রকমের তেল ব্যবহার করতে পারি যেরকম নারকেল তেল, চা গাছের তেল বা টি ট্রি অয়েল, আলমন্ড অয়েল বা বাদাম তেল ইত্যাদি।
- আমাদের শরীরের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন প্রোটিন গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজনীয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৮০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। প্রোটিন যতটা আমাদের শরীরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, ঠিক ততটাই আমাদের চুল দ্রুত লম্বা করার উপায়। প্রতিদিন আমাদের খুব বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে আমাদের চুল দ্রুত লম্বা হয় ও ঘন হয় এবং চুলের গোড়া যথেষ্ট শক্ত হয়। আমাদের মাথার ত্বকে যে ফলিকল গুলো থাকে তার বেশিরভাগ অংশ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। শুধু তাই নয় বায়োটিন খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান যা থেকে কেরাটিন তৈরি হয়। কেরাটিন আমাদের চুলের বৃদ্ধি বা গ্রোথের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পরিমাণ প্রোটিনযুক্ত কিছু খাদ্য যেরকম ডিম, মাছ, মাংস, সয়াবিন, পালং শাক, ছোলা, বিভিন্ন রকম বাদাম ইত্যাদি আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত।
- প্রতিদিন আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল এর প্রয়োজন থাকে। তবে বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে সাথে আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করে, আমাদের চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল আমাদের শরীর তথা চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় যেরকম, ভিটামিন C, ভিটামিন A, ভিটামিন E, ভিটামিন D, জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি । বিভিন্ন ফল এবং সবজির মধ্যে আমরা এই ভিটামিন এবং মিনারেল গুলি কে পেয়ে থাকি যেরকম, আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি, লেবু, ক্যাপসিকাম, গাজর ইত্যাদি।
- আমরা যদি নিয়মিত প্রতিমাসে অথবা দুমাস অন্তর আমাদের চুলের অগ্রভাগ বা শেষের অংশ কেটে দিতে পারি তাহলে আমাদের চুলের লম্বা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তার কারণ চুলের শেষের অংশ খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে যায় যার ফলে আমাদের চুল লম্বা হতে পারে না। কিন্তু আমরা যখনই চুলের শেষের অংশ কেটে দেবো তখন ভেঙে যাওয়া অংশগুলি কেটে বাদ হয়ে যাবে এবং সেখান থেকে খুব দ্রুত চুল বাড়তে থাকবে । তাই আমাদের চুল লম্বা করার উপায় নিয়মিত চুলের অগ্রভাগ বা শেষের অংশ কেটে ফেলা।
- এখনকার দিনে আমরা আমাদের চুলের উপর অনেক বেশি পরিমাণ কেমিক্যালস এবং তাপ বা হিট ব্যবহার করি, সুন্দর দেখার জন্য এবং স্টাইল করার জন্য, যেরকম বিভিন্ন রকমের রং বা কালার চুলের উপর ব্যবহার করা, এবং বাঁকা চুলকে তাপ বা হিট ব্যবহার করে সোজা এবং মসৃণ করা। এর ফলস্বরূপ আমাদের মাথার ত্বকের বা স্কাল্পের মধ্যে থাকা ফলিকল গুলি নষ্ট হয়ে যায় ফলে আমাদের চুল উঠে যায় এবং চুলের বৃদ্ধির হার কমে যায় এবং চুল ভেঙে যায়। তাই বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং তাপ বা হিট আমাদের চুলের জন্য একদমই ব্যবহার করা উচিত নয়। এর ফলে আমাদের চুল নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল লম্বা হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং দিন প্রতিদিন আমাদের চুল সাদা হতে থাকে।
- চুল লম্বা করার উপায় দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা। আমরা যদি দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করি তাহলে আমাদের মাথার ত্বকের বা স্কাল্পের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রেশন পৌঁছাতে পারে এবং রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো মতো হয়। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প এর কোষগুলি সতেজ থাকে ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং চুল খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। তাই দৈনিক এক ঘন্টা এক্সারসাইজ করা আমাদের শরীর এবং চুল বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
- আমরা যদি নিয়মিত আমাদের চুলে বিভিন্ন অর্গানিক এবং প্রাকৃতিক ভেষজ ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় সাথে আমাদের চুল খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। ওই প্রাকৃতিক ভেষজ ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প সতেজ ও সুস্থ থাকে এবং কোনরকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এমনকি খুশকি এবং অন্যান্য পরজীবী হবার প্রবণতা ও কমে যায়। কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ যেমন পেঁয়াজের রস, ডিম, নিম তেল অথবা নিম পাতার রস, পাতি লেবু, গ্রিন টি অথবা চা গাছের তেল ইত্যাদি নিয়মিত ব্যবহার আমাদের চুল তাড়াতাড়ি লম্বা করার অন্যতম উপায়।
- আমরা যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ জল গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় বিশেষ করে শীতকালে। যখনই আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন বা জলের অভাব দেখা দেয় তখনই আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প শুষ্ক হতে শুরু করে যার ফলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে নানান রকম সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং খুশকি বা পরজীবী হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউট্রেশন, অক্সিজেন এবং রক্ত সরবরাহ হয় না তার ফলে আমাদের চুল ওঠার প্রবণতা দেখা দেয় এবং চুল পর্যাপ্ত পরিমাণ লম্বা বা বৃদ্ধি হতে পারে না তাই প্রতিদিন সঠিক পরিমাণ জল গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- সূর্যের প্রখর রোদ এবং বিভিন্ন দূষিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা যদি খুব বেশি সময় ধরে থাকি তাহলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়াল বা ফাঙ্গাল সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমাদের চুল পর্যাপ্ত পরিমাণ লম্বা হতে পারে না তাই আমাদের উচিত সূর্যের প্রখর রোদ এবং বিভিন্ন দূষিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যাওয়ার পূর্বে আমাদের মাথা এবং চুলকে একটি টুপি বা হেড ক্যাপ অথবা ওই জাতীয় পাতলা আবরণ দ্বারা ঢেকে রাখা।
- অত্যাধিক মানসিক চিন্তা সরাসরি আমাদের চুলের কোন ক্ষতি করতে পারে না তবে অত্যাধিক মানসিক চিন্তা আমাদের ব্লাড প্রেসার কে হাই করতে পারে যার ফলে আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যায় এবং ক্রমাগত আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কমতে থাকে এবং আস্তে আস্তে আমাদের মাথার ত্বকে থাকা ফলিকলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে যার ফলে আমাদের চুল পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়তে পারে না। তাই নিয়মিত আমাদের যোগাসন এবং মাথার অঙ্গমর্দন বা মাসাজ করা উচিত তার ফলে আমাদের মানসিক চিন্তা অনেকটা কমতে পারে।
তবে আমাদের চুল কতটা লম্বা হবে বা বৃদ্ধি পাবে সেটি কিছুটা নির্ভর করে আমাদের বংশগত বা জেনেটিক্যাল প্রগতির উপর। অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে আমাদের ঔষধ বা মেডিসিন গ্রহণ করতে হয় এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমাদের চুল খুব বেশি লম্বা হয় না।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে ১১ টি বিস্ময়কর তথ্য।
কিভাবে চুল উৎপন্ন হয় ?
আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি তখন আমাদের মাথার ত্বকে ৯০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ এর কাছাকাছি ফলিকল বা বীজকোষ থাকে। আমাদের চুল ফলিকল বা বীজকোষ এর উপর ভিত্তি করে বড় হতে থাকে। বিভিন্ন নিউট্রেশন এবং অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে এই ফলিকল বা বীজ কোষের মাধ্যমে আমাদের চুল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
প্রতিদিন 50 থেকে ১০০ টা চুল পড়ে যায় এবং তার পরিবর্তে নতুন চুলের উৎপন্ন হয়। তবে আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে তার সাথে আমাদের মাথার ত্বকে ফলিকল বা বীজ কোষের সংখ্যা কমতে থাকে এবং নতুন চুল উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ও কমতে থাকে।
চুল লম্বা হতে কতদিন সময় লাগে ?
আমাদের মাথার ত্বকের উপর নির্ভর করে ০.৫ থেকে ১.৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে আমাদের চুল লম্বা হয়। তবে এক মাসে আমাদের চুল কতটা লম্বা হবে সেটি অনেক গুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেরকম, আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং চুলের যত্ন নেওয়া।
আমাদের খাদ্যাভ্যাস :
আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ না করি এবং ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের ফলিকল বা বীজ কোষের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউট্রেশন এবং অক্সিজেন সরবরাহ হয় না, তাহলে আমাদের চুল তার সর্বোচ্চ পরিমাণ লম্বা কি করে হবে? এটি আমাদের চুল লম্বা না হওয়ার কারণ তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের চুল লম্বা করার জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয়।
চুলের যত্ন নেওয়া :
আমরা যদি নিয়মিত চুলের যত্ন না করি, নিয়মিত চুলে তেল এবং জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার না করি তাহলে আমাদের চুল এবং চুলের গোড়া অপরিষ্কার থাকে এবং এর ফলে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। তার ফলে আমাদের চুল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটিও আমাদের চুল লম্বা না হওয়ার অন্যতম আরও একটি কারণ। তাই প্রতিদিন আমাদের চুলের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে আলোচিত বিষয়গুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 5 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com