প্রতিদিন ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো? ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

Share With Your Friends

ডিম খাওয়ার উপকারিতা

ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান। তাই নিয়মিত ডিম খাওয়া বা গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী এবং পুষ্টিকর। 

ডিম আমাদের কাছে খুবই সহজলভ্য, তাই খুব সহজেই খাদ্য রূপে আমরা তা গ্রহণ করতে পারি। একটি সেদ্ধ ডিম থেকে আমরা ৬ গ্রাম প্রোটিন পেয়ে থাকি এবং আমরা জানি প্রোটিন আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাই ছোট থেকে বড় সকলের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম অবশ্যই রাখা উচিত। 

 

ডিম খাওয়ার উপকারিতা : 

নিয়মিত ডিম খেলে বা গ্রহণ করলে যতটা আমাদের শারীরিক বিকাশ হয় ততটাই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাই ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন। একটি ডিমের পুষ্টিগত গুণাগুণ বা নিউট্রিশন ফ্যাক্ট, 

  • ক্যালোরি ৭৮
  • প্রোটিন ৬.৩ গ্রাম 
  • ফ্যাট ৫.৩ গ্রাম 

এছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান যেরকম, 

ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম ইত্যাদি। 

  • একটি ডিমের মধ্যে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের শরীরের মাংসপেশীকে বৃদ্ধি করতে এবং আমাদের শারীরিক গঠনকে উন্নত করতে। ডিমে উচ্চ প্রোটিন থাকার ফলে আমরা ডিম খেলে দীর্ঘ সময় আমাদের পেট ভরা থাকে। ফলে বারবার খাবার চাহিদা কমে যায়। এর ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে। তাই ডিম আমাদের শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক সাহায্য করে। 
  • নিয়মিত ডিম খাওয়া বা গ্রহণ করা আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যে চুল সৃষ্টি হয় তা বিভিন্ন প্রোটিনের সমন্বয় তাই আমাদের চুলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • ডিমের মধ্যে লুটেইন এবং জিক্সানথিম নামক দুইটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাহায্য করে আমাদের চোখের মধ্যে অবস্থিত রেটিনার কার্যকারিতা কে বৃদ্ধি করতে। তাই নিয়মিত ডিম খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের দৃষ্টি শক্তি অনেক বেশি উন্নত হয়। শুধু তাই নয় নিয়মিত ডিম খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের চোখে ছানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • ডিমের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড  পাওয়া যায়। এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাহায্য করে আমাদের রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে আমাদের মধ্যে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই ডিম খাওয়ার উপকারিতা আমাদের হৃদয়ের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • আমাদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ  কোলেস্টেরল দুধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে। নিয়মিত দুটি করে ডিম খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে এইচ ডি এল (HDL) কোলেস্টেরল বা গুড কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যদিও অতিরিক্ত পরিমাণ ডিম খেলে আমাদের শরীরে এল ডি এল (  LDL) ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রাও সামান্য পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তবে গুড কোলেস্টেরল সাহায্য করে আমাদের শরীরের ব্যাড কলেস্টরলের মাত্রা কে কম করতে। তাই নিয়মিত ডিম খাওয়া আমাদের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • ডিমের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে কোলিন পাওয়া যায়। এই কোলিন ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অন্তর্গত। কোলিন সাহায্য করে আমাদের শরীরে কোষের পর্দা বা ঝিল্লি কে সৃষ্টি করতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে উন্নত করতে। এছাড়াও কোলিন সাহায্য করে আমাদের শরীরের মাংসপেশী এবং স্নায়ুতন্ত্র কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে। যদিও খুব কম খাবারের মধ্যে কোলিন নামক উপাদান টি পাওয়া যায়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : প্রতিদিন রাতে ৯ টা করে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

ডিমের মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি এবং সিলেনিয়াম। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে তাই নিয়মিত ডিম খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের হাড় এবং শারীরিক কাঠামো অনেক উন্নত হয়। নিয়মিত ডিম খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা যেরকম হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

ডিম খাওয়ার অপকারিতা :  

ডিমের যেমন উপকারিতা রয়েছে তার পাশাপাশি এর অপকারিতাও রয়েছে। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন আছে, অতিরিক্ত অ্যালবুমিন গ্রহণে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। তাই দৈনন্দিন ডিমের সাদা অংশ খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত নয়।

  • ডিমে অনেকেরই অ্যালার্জি সমস্যা থাকে তাই বেশি পরিমাণে ডিম খেলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • বেশি ডিম খেলে পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে।
  • অনেকেই মনে করেন বেশি পরিমাণে ডিম খেলে অর্থাৎ ডিমের কুসুম খেলে রক্তে এল ডি এল (LDL) ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ফলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : সত্যি কি ভাত খেলে ওজন বাড়ে? জেনে রাখুন ভাত খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা।

প্রতিটি খাবারের যেমন ভাল কিছু দিক থাকে তেমনি খারাপ দিকও থাকে। তবে সেভাবে দেখলে ডিমের সেরম কোন অপকারিতা নেই।  সঠিক নিয়ম মেনে ডিম খেলে অপকারের চেয়ে উপকারিতাই বেশি পাওয়া যায়।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য –  যদি আপনাদের আগে থেকেই কোনরকম শারীরিক সমস্যা থাকে বা অ্যালার্জিজনিত কোনরকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ডিম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 


Share With Your Friends