মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা ৯ টি তথ্য

Share With Your Friends

মেথি খাওয়ার উপকারিতা

মেথি নিয়মিত খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, আমাদের শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হয় বা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং আমাদের পাচনতন্ত্র অনেক উন্নত হয়।

সাধারণত আমরা মেথি শাক এবং মেথি বীজ খাদ্য রূপে ব্যবহার করে থাকি। বহু যুগ ধরে ঘরোয়া চিকিৎসায় মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথি বীজের মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারী উপাদান। এটি একটি অত্যন্ত কার্যকারী ও পুষ্টিকর খাদ্য শস্য রূপে পরিচিত। 

মেথির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেল। এছাড়াও মেথির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। মেথি বীজ কে ভালো করে পেশাই করে চূর্ণ বা পাউডার রূপে ব্যবহার করতে পারি এছাড়াও মেথি পাতাকে শাক রূপে খাদ্যের জন্য ব্যবহার করতে পারি।  

যদিও মেথির উপকারিতা এবং মেথির ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় মেথি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। 

 

মেথি খাওয়ার উপকারিতা :

মেথি ঔষধিক গুণসম্পন্ন একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপে পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম মেথির পুষ্টিগুণ বা নিউট্রিশন ফ্যাক্ট, 

  • প্রোটিন ২৩ গ্রাম 
  • ফ্যাট ৬.৪১ গ্রাম 
  • কার্বোহাইড্রেট ৫৮.৪ গ্রাম 
  • ফাইবার ২৪.৬ গ্রাম 

এছাড়াও আছে কিছু খনিজ পদার্থ যেরকম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, সিলোনিয়াম ইত্যাদি। 

মেথির মধ্যে পাওয়া যায় বিশেষ কিছু ভিটামিন যেরকম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ( থিয়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন ), ভিটামিন এ ইত্যাদি। 

 

রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ : 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ উপাদান। তার কারণ নিয়মিত মেথি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

মেথির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হাই ব্লাড সুগার অথবা ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

মেথি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় :

নিয়মিত মেথি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে LDL ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রা কম হয় বা নিয়ন্ত্রণ থাকে। এছাড়াও মেথি গ্রহণ করলে HDL গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আমরা জানি আমাদের শরীরের যদি ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত কঠিন রোগ হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। 

কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত মেথি খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ৮ টি তথ্য

 

দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে :

আমরা যদি নিয়মিত মেথি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের বেশিরভাগ সময় পেট ভর্তি অনুভব হবে অর্থাৎ আমাদের খুব বেশি খিদে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। 

তার কারণ মেথির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার পাওয়া যায়। যা আমাদের অত্যাধিক পরিমাণ খিদে পাওয়ার সম্ভাবনাকে কম করতে সাহায্য করে। তাই আমরা যদি নিয়মিত মেথি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ওজন দিন প্রতিদিন কমতে থাকবে।

 

ব্যথা এবং যন্ত্রণাতে মেথির উপকারী :

মেথির মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড নামক একপ্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। এই উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরের মধ্যে ব্যথা বা যন্ত্রণা কে কম করতে। তাই আমরা যদি নিয়মিত মেথি খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শারীরিক ব্যথা এবং যন্ত্রণা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। 

এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মহিলাদের মধ্যে পেটে ব্যথা, পেটে যন্ত্রণা এবং পেটে ক্র্যাম্প ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাই নিয়মিত মেথি খেলে বা গ্রহণ করলে মহিলাদের এই জাতীয় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

 

আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য মেথির ভূমিকা : 

মেথির মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এই ফাইবার সাহায্য করে আমাদের পেটের মধ্যে গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে। যার ফলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। 

তাই নিয়মিত মেথি খেলে বা গ্রহণ করলে, আমাদের পেটে ব্যথা, গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। মাঝেমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ মেথি শাক খেলে আমাদের পাচনতন্ত্র অনেক উন্নত হয়। 

 

মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধের জন্য মেথির ভূমিকা :

আমরা জানি এখনকার দিনের বেশিরভাগ মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকে দুধ সৃষ্টি হয় না তাদের নবজাত সন্তানের জন্য, যার ফলস্বরূপ আমাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে বাজার বা মার্কেট থেকে দুধ কিনে আনতে হয় শিশুটিকে খাওয়ানোর জন্য।

তবে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশগুলি যেরকম ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীনে মায়েদের কে মেথি খাওয়ানোর প্রচলন আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ সৃষ্টির জন্য। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ উৎপাদনে মেথির ভূমিকা অনস্বীকার্য। যদিও এই বিষয়ে আরো অনেক তথ্যের প্রয়োজন আছে। 

 

টেস্টোস্টোনের মাত্রা বৃদ্ধিতে মেথির ভূমিকা : 

পুরুষদের মধ্যে যদি টেস্টোস্টনের মাত্রা কম হয় তাহলে সঠিকভাবে শারীরিক বিকাশ হবার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু যদি আমরা নিয়মিত মেথি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে যার ফলে আমাদের শারীরিক বিকাশ অনেক দ্রুত গতিতে হবে। 

শুধু তাই নয় নিয়মিত মেথি খেলে বা গ্রহণ করলে পুরুষদের শরীরে শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে যা বংশবৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। 

 

চুলের সমস্যা সমাধানে মেথি :

চুল পড়া সমস্যায় এবং চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকোটিনিক অ্যাসিড রয়েছে যা আমাদের চুলের গোড়াকে অনেক শক্ত করতে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

নিয়মিত মেথি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো মতো হয়। আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং প্রোটিন সরবরাহ হয় যার ফলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে বা উৎপন্ন হতে অনেক সাহায্য করে। 

মেথিতে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান যা মাথার ত্বকে নানা রকমের সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাকে দূর করে। মেথি বীজের তেল বা মেথি বীজের পেস্ট নিয়মিত মাথার ত্বকে প্রয়োগ করলে খুশকি বা ওই প্রকৃতির ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

ত্বকের যত্নে মেথি :

মেথির মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান, যা আমাদের ত্বকের ব্রণ, ফুসকুড়ি, এলার্জি ইত্যাদি কে কমাতে সাহায্য করে।

মেথি ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্ক ত্বককে মসৃণ করে তোলে। মেথি ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে। নিয়মিত ত্বকে মেথি ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ, ব্রনের দাগ ও বলিরেখা দূর হবে। প্রাকৃতিক এই উপাদান ব্রণের দাগ দূর করার পাশাপাশি আমাদের চেহারায় বয়সের ছাপ কমায় ও কালচে ভাব দূর করে ত্বক কে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

 

কিভাবে ব্যবহার করবেন মেথি বীজ?

এক থেকে দুই চামচ মেথি বীজ এক গ্লাস জলে সারারাত ভিজিয়ে রেখে দেব, সকালে সেই জলটা আমরা ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে খেতে পারি বা সেই জলটা ফুটিয়ে চা তৈরি করে সেটাকে আমরা গ্রহণ করতে পারি।

  • মেথি গুঁড়ো করে রেখে দুপুরে ও রাতে খাবার খাওয়ার আগে আমরা খেতে পারি। 
  • মেথিকে আমরা তিন চার দিন ভিজিয়ে রাখলে তার থেকে অঙ্কুর বার করে সেই অঙ্কুরিত মেথি কে এয়ারটাইট কন্টেইনারের মধ্যে রেখে এক সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারি। এই অঙ্কুরিত মেথি মুড়ি দিয়ে খেতে পারি বা স্যালাড হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
  • মেথি ভেজে গুঁড়ো করে রায়তা বা স্যালাড এর সাথে মিশিয়েও আমরা খেতে পারি।
  • মেথি বীজ ভিজিয়ে রেখে সেটাকে পেস্ট করে তার সাথে দই মিশিয়ে আমরা চুলের স্ক্যাল্প ব্যবহার করতে পারি। 
  • মেথি পেস্ট করে  তার সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে আমরা আমাদের মুখে ব্যবহার করতে পারি। এর ফলে আমাদের মুখে থাকা ব্রনও, ব্রণের দাগ, চোখের তলার কালি ইত্যাদি দূর হবে।

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অজানা ১০ টি তথ্য

 

মেথি খাওয়ার অপকারিতা :

মেথি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান। আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে ভীষণ কার্যকারী উপাদান হলো এই মেথি। কিন্তু মেথি কোন কিছুই অত্যাধিক পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এর ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।

  • অত্যাধিক পরিমাণ মেথি বা মেথি জল খেলে অনেক সময় কিছু মানুষের ত্বকে এলার্জি দেখা দিতে পারে। এরকম কিছু হলে তাদের মেথি জল না খাওয়াই ভালো।
  • যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট সমস্যা আছে তাদের অত্যাধিক পরিমাণ মেথি জল এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এতে সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের এবং ছোট বাচ্চাদের মেথি জল একদমই খাওয়া উচিত না। যার ফলে পেটে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। 
  • মেথি জল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ফলে যাদের এমনিতেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম তাদের একদমই এই জল গ্রহণ করা উচিত নয়।
  •  অত্যাধিক পরিমাণ মেথি জলের কারণে পেটে নানা সমস্যা হতে পারে পেটে ব্যথা হতে পারে, গ্যাস হতে পারে, ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে। এরকম সমস্যা হলে একদমই মেথি জল পান করা উচিত নয়। 
  • আপনারা যদি কোন ওষুধ সেবন করেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, ওষুধ গ্রহণের দু ঘন্টা পূর্বে বা ওষুধ গ্রহণের দু’ঘণ্টা পরে মেথি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : মেথি গ্রহণের পূর্বে বা খালি পেটে মেথি গ্রহণ করার পর যদি কোন রকম কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তবে অবশ্যই নিকটবর্তী কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

 


Share With Your Friends