আমরা অনেক সময় দেখেছি আমাদের আশেপাশের কিছু মানুষ শারীরিকভাবে বিভিন্ন রোগের কারণে ভীষণভাবে ভুক্তভোগী হয় এবং তাদের মধ্যে কোন না কোন কারণে শরীর খারাপ লেগেই থাকে। এই ক্রমাগত শরীর খারাপের লক্ষণ নির্ভর করে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমের উপর।
প্রতিটি মানুষের উচিত তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করা। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তর আলোচনার পূর্বে আমাদের জেনে রাখা উচিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি? এবং আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে কাজ করে?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাকে বলে ?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম একটি জটিল পদ্ধতি যা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ, প্রোটিন, অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারো, এবং আমাদের রক্তের কিছু অংশ যেরকম লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকার সমন্বয় একটি অন্তর্জাল বা নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
এই অন্তর্জাল বা নেটওয়ার্ক আমাদের শরীর কে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংগঠিত সংক্রমণ এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীর এবং শরীরে অবস্থিত প্রতিটি অংশের সাথে খুব ভালোমতো পরিচিত তাই যখনই কোন ফরেন পার্টস অথবা অপরিচিত বস্তু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখনই আমাদের শরীরে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেরকম জ্বর, কাশি।
শুধু তাই নয় যখনই আমাদের শরীরে কোন অপরিচিত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাল ইত্যাদি প্রবেশ করে তখন আমাদের শরীর সেই সব ক্ষতিকারক বিষয়গুলির সাথে লড়াই করে আমাদের কে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে। এই সম্পূর্ণ পদ্ধতি টি কে আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অথবা ইমিউনিটি সিস্টেম বলতে পারি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় :
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে আমাদের বয়সের সম্পর্ক আছে। যেরকম ছোট বাচ্চা এবং বয়স্ক বা বৃদ্ধ মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দুর্বল হয় তবে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক একটু বেশি হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব সহজেই বৃদ্ধি করা যায় বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে, দৈনিক ব্যায়ামের বা এক্সারসাইজ মাধ্যমে এবং কিছু খারাপ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির খাবার তালিকা :
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য :
যে সমস্ত খাবারের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন A, ভিটামিন B কমপ্লেক্স, ভিটামিন C, ভিটামিন E পাওয়া যায় সেই সমস্ত ফল বা সবজিগুলি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয় ভিটামিন C এবং ভিটামিন A আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মুখ্য দুটি উপাদান। বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি যাদের মধ্যে ওই জাতীয় ভিটামিন গুলির পরিমাণ অনেক বেশি যেরকম,
- পেয়ারা, পাতি লেবু, কমলালেবু, শরবতী লেবু, ক্যাপসিকাম, পালং শাক, ব্রকলি, আপেল, কলা, পাকা পেঁপে ইত্যাদি।
ভেষজ উদ্ভিদ :
কিছু উদ্ভিদ আছে যাদেরকে আমরা প্রতিদিন আমাদের খাদ্যরূপে গ্রহণ করে থাকি এবং এই খাদ্যগুলির মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা কে কম করতে সাহায্য করে, যেরকম
- তুলসী পাতা, পুদিনা পাতা, অ্যালোভেরা, রসুন, আদা, হলুদ, দারচিনি, ইত্যাদি।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে ২০ টি আশ্চর্যজনক তথ্য।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য :
আমরা জানি আমাদের শরীরের মাংসপেশী কে উন্নত করতে প্রোটিনের ভূমিকা সব থেকে বেশি। তবে আমাদের লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে অবস্থিত হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে প্রোটিনের ভূমিকা অসামান্য। শুধু তাই নয় নিয়মিত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয়। কিছু প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আছে যাদের মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর উপস্থিতি ও পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন প্রকার ডাল যেরকম মসুর ডাল, ছোলার ডাল, মুগ ডাল ইত্যাদি।
- বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেরকম আলমন্ড, কাজু, পেস্তা, আখরোট, চিনা বাদাম ইত্যাদি।
- বিভিন্ন প্রকার মাছ যেরকম রুই, কাতলা, ইলিশ ইত্যাদি।
- মুরগির মাংস, মুরগির ডিম।
- পনির, দুধ।
অন্যান্য খাদ্য :
- দইয়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গুড ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাদের শরীরে খাদ্য পচনে অনেক সহায়তা করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত করে তাই দই কে ন্যাচারাল প্রোবায়োটিক বলা হয়। যদিও দইয়ের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির খাবার তালিকায় দইয়ের স্থান সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- গ্রিন টি এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফ্ল্যাভোনয়েড পাওয়া যায়, যা একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আরেকটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রিন এর মধ্যে পাওয়া যায় যাকে EGCG বলা হয়। আমরা যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রিন টি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে ওই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির কারণে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয় যেরকম, আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে, আমাদের ব্লাড সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি উন্নত হয়।
- সানফ্লাওয়ার ওয়েল অথবা সূর্যমুখী বীজের তেল এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন E, ভিটামিন B৬, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, এবং সিলেনিয়াম পাওয়া যায়। যদিও আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি ভিটামিন ই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই এবং সিলেনিয়াম আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে ৭ টি বিস্ময়কর তথ্য।
দৈনিক ব্যায়াম বা শরীরচর্চার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা :
আমরা যদি প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করি তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয়। দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে।
শুধু তাই নয় নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে আমাদের মাংসপেশী, শরীরের হাড় এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়। তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সেল বা কোষ গুলি অনেক বেশি উন্নত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তবে একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা খুবই প্রয়োজন দৈনিক ব্যায়াম বা শরীরচর্চা বলতে শুধুমাত্র ভারী লৌহ বস্তু দ্বারা প্রশিক্ষণ বোঝায় না। সাঁতার করা, মাঠে খেলা করা, প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করা বা জগিং করা কে ও শরীরচর্চা বলতে পারি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় কেন?
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা নির্ভর করে আমাদের দৈনিক জীবন যাপনের উপর। অনিয়মিত জীবন যাপন এর কারণে আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আমাদের উচিত সেই সব কারণ গুলিকে যতটা সম্ভব সঠিক করা আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য না গ্রহণ করা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সঠিক সময় খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।
- প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আমরা সারাদিন ধরে যে পরিমাণ পরিশ্রম করি তার ফলে আমাদের শরীরের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় তা রাতের বেলায় ঘুমানোর মাধ্যমে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে আমাদের মানসিক শক্তি অনেক উন্নত হয় এবং চিন্তার বিকাশ হয়। শুধু তাই নয় নিয়মিত ঘুম আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- বিভিন্ন মানসিক চাপ এবং বদ অভ্যাসের কারণে আমাদের মধ্যে নেশা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমরা খুব ভালো মতো জানি নেশা করা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকর। অ্যালকোহল গ্রহণ করা, ধুম্রপান করা বা তামাক জাতীয় বস্তু সেবন করা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। আমাদের লিভার বা যকৃত, কিডনি এবং শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুস এর ক্ষতি হতে থাকে যার ফলে আমাদের শরীর অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমাদের শরীরে ইমিউন সেল বা কোষ নষ্ট হতে থাকে তাই নেশা করা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মুখ্য লক্ষণ।
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর :
কোন গ্রুপের রক্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি?
আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বা কম সেটা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। তবে গ্রুপ O রক্ত যাদের সাধারণত তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। শুধু তাই নয় যাদের ব্লাড গ্রুপ O তাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ বা কোন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত ইনফেকশন এমনকি covid-19 ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা অনেক কম হয়।
শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় ?
আমরা উপরে আলোচনা করেছি রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করার উপায় গুলি সম্পর্কে। তবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সবথেকে সহজ তিনটি উপায়,
১. পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে,
২. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের মাধ্যমে,
৩. প্রতিদিন খেলাধুলার মাধ্যমে ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ ?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার ঔষধ পাওয়া যায় তবে সবথেকে বেশি কার্যকরী ভিটামিন এবং সেলেনিয়াম যুক্ত সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক। তবে ওই জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত খাদ্য গুলি গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
Thank you everyone for coming to our website www.healthybangla.in and a warm welcome to all of you.
Hi, my name is Arunima Morial and I am from Kolkata, India.
I have been writing health related articles for the last 3 years.
All the articles me and my team write are always reviewed by Sagar Ghosh (Science Graduate, Location- Shyamnagar, West Bengal) and Dr Gautam Ghosh (B.H.M.S, M.D in Homoeopathy, Location- Shyamnagar, West Bengal).
We always share the reference web page link from where we get correct information in the article.
Please feel free to contact me on my email ID sg133322@gmail.com