সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে ১০ টি বিস্ময়কর তথ্য

Share With Your Friends

সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেরা। সজনে গাছের পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান পাওয়া যায় এবং সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সজনে গাছের পাতাকে সুপার ফুড বলা হয়। 

পূর্বে সজনে গাছ এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশে পাওয়া যেত এবং পরবর্তীকালে সজনে গাছের উপকারিতা জানার পর সারা বিশ্বে সজনে গাছের বিপুল পরিমাণ চাষ হয়। 

আমরা সজনে গাছের পাতা এবং সজনে গাছের ডাটা বা ড্রামস্টিক কে নিয়মিত খেয়েও থাকি কিন্তু সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য কেন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া উচিত। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় সজনে পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।

 

সজনে পাতার উপকারিতা : 

১০০ গ্রাম সজনে পাতার পুষ্টিগুণ বা নিউট্রিশনাল ফ্যাট :

  • ক্যালোরি ৬৪
  • প্রোটিন ৯.৪ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৮.২৮ গ্রাম ( টোটাল ডায়েটারি ফাইবার ২ গ্রাম )
  • ফ্যাট ১.৪ গ্রাম

 

এছাড়াও আছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,

  • ভিটামিন A
  • ভিটামিন B৬
  • ভিটামিন C
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস
  • পটাশিয়াম
  • সোডিয়াম
  • কপার
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

 

এছাড়াও থাকে কিছু ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট যেরকম,

  • টান্নিনস
  • স্টেরোলস
  • টারপেনয়েডস
  • ফ্লাভোনইডস
  • সাপনিনস
  • অন্থারাকুইনোনস
  • অ্যালকালয়েড ইত্যাদি।

 

  • সজনে পাতাতে বা মরিঙ্গা পাউডারে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট থাকে এবং বিশেষ করে ভিটামিন C, ভিটামিন A এবং ভিটামিন B কমপ্লেক্স যা আমাদের শরীর কে সাহায্য করে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়তে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। তাই সজনে পাতার উপকার আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ সজনে পাতা নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত হয় এবং আমাদের শরীরে কোনরকম ভিটামিন এবং মিনারেলসের অভাব হয় না।
  • নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার কারণ সজনে পাতায় ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড সাহায্য করে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে আমাদের মধ্যে হাই ব্লাড সুগার এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • ১০০ গ্রাম সজনে পাতার গুড়াতে বা মরিঙ্গা পাউডারে প্রায় ৯ থেকে ১০ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যার মধ্যে এসেন্সিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং নন-এসেন্সিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। এর থেকে আমরা বুঝতেই পারছি যে সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকদিন আমরা যা খাবার খেয়ে থাকি তার মধ্যে ৬০ থেকে ১৫০ গ্রাম প্রোটিন খুবই প্রয়োজন আমাদের শরীরের জন্য এবং সজনে পাতার গুড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার খুব ভালো একটা প্রোটিনের উৎস যা খুব সহজেই পাওয়া যায়।
  • সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের হৃদয় বা হার্টের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ অ্যালকালয়েড নামক একপ্রকার বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান সজনে পাতাতে পাওয়া যায়। অ্যালকালয়েড উপাদানটি আমাদের শরীরের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ট্রাই গ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কম করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত সজনে পাতা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের হৃদয় বা হার্ট সুস্থ থাকে। 
  • বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের কোষগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যায়। এই অক্সিডেটিভ ড্যামেজ বা ক্ষতি আমাদের শরীরের ক্যান্সারের মুখ্য কারণ। সজনে পাতাতে পাওয়া যায়, বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান নিয়াজিমিসিন। এই উপাদানটি সাহায্য করে আমাদের শরীরকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে। শুধু তাই নয় সজনে পাতাতে জিটিন নামক এক প্রকার উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করে। তাই নিয়মিত সজনে পাতা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 
  • আমাদের মধ্যে অনেকের বিভিন্ন রকম পেটে সমস্যা দেখা যায় যেরকম, খাবার হজম না হওয়া, খুব বেশি অ্যাসিডিটি এবং পেটে গ্যাস হওয়া ইত্যাদি, ফলে এর জন্য পরবর্তী সময় আমাদের পেটে নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়। সজনে পাতাতে বা মরিঙ্গা পাউডারে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং ভিটামিন B কমপ্লেক্স রয়েছে যা আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কে উন্নত করতে সাহায্য করে। শুধু তাই না নিয়মিত মরিঙ্গা পাউডার বা সজনে পাতা গ্রহণ করলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন সমস্যা হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 
  • অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষগুলি যেরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঠিক একই রকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের লিভার বা যকৃতের কোষগুলি। সজনে পাতাতে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পলিফেনল। এই পলিফেনল সাহায্য করে আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনরায় সুস্থ করতে। শুধু তাই নয় নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়ো খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের লিভার বা যকৃতে এনজাইম এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের যকৃত বা লিভারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • সজনে পাতার মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান পাওয়া যায়। এই অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান সাহায্য করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়তে। তাই নিয়মিত সজনে পাতা খেলে বা গ্রহণ করলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাঙ্গাস সম্পর্কিত ইনফেকশন বা সংক্রমণ আমাদের শরীরে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয়, সজনে পাতার গুড়োতে ইথানলিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। ইথানলিক উপাদানটি সাহায্য করে আমাদের পেটে মধ্যে থাকা  কৃমি বা পরজীবী কে কম করতে। 
  • সজনে পাতা তে অ‍্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায়। এই অ‍্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান সাহায্য করে আমাদের শারীরিক যন্ত্রণা এবং ব্যথাকে কম করতে। শুধু তাই নয়, সজনে পাতার নির্যাস দিয়ে একপ্রকার তেল পাওয়া যায় যাকে মরিঙ্গা ওয়েল বলে। এই মরিঙ্গা ওয়েল সাহায্য করে আমাদের আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যাথা কে কম করতে। তাই সজনে পাতা খাবার উপকারিতা আমাদের ব্যথা বা যন্ত্রণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিনয়েড  নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। বেটা-ক্যারোটিন, ক্যারোটিনয়েড এর একটি অংশ। আমাদের শরীর পরবর্তীকালে এই বেটা-ক্যারোটিন কে ভিটামিন A তে রূপান্তর করে। ক্যারোটিনয়েড সাহায্য করে চোখের দৃষ্টি শক্তি কে উন্নত করতে এবং চোখ সম্পর্কিত সমস্যা কে কম করতে। তাই নিয়মিত সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা ৯ টি তথ্য

সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম বা মরিঙ্গা পাউডার তৈরি করার পদ্ধতি কি ?

  • আমরা সজনে গাছ থেকে সজনে পাতার ডাল গুলিকে ভেঙে বা বাজার থেকে সজনে পাতার ডাল কিনে এনে ২ থেকে ৩ বার ভালো করে ধুয়ে আলো ছায়া জায়গাতে পরিষ্কার কাপড় পেতে ২ দিন ভালো করে শুকিয়ে নেব। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সরাসরি সূর্যের প্রখর রোদে সজনে পাতাকে রেখে শুকাতে দেব না।
  • তারপর ওই শুকনো পাতাগুলোকে ভালো করে পেশাই করে নেব।
  • এরপর একটি পরিষ্কার কাঁচের কৌটোতে রেখে দেবো পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য।

 

সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম কি?

  • সকালে এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলের সাথে এক চামচ মরিঙ্গা পাউডার ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে গ্রহণ করতে পারি।
  • বিভিন্ন রকম স্যালাডের সাথে সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার মিশিয়ে সকালে ব্রেকফাস্ট এর পর বা দুপুরে লাঞ্চের পর গ্রহণ করতে পারি।
  • এছাড়াও ডালে বা বিভিন্ন তরকারিতে সরাসরি সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার মিশিয়ে আমরা রান্না করে গ্রহণ করতে পারি।

 

সাজনে পাতার অপকারিতা কি?

সজনে পাতার গুড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার বা গ্রহণ করার সেরকম কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সজনে পাতার গুড়ো না খাওয়াই ভালো যেরকম,

  • আমাদের ব্লাড প্রেসার কে কম করতে সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তবে যদি আপনি প্রথম থেকে রক্ত চাপ বা ব্লাড প্রেসার কম করার ঔষধ খেয়ে থাকেন তবে সজনে পাতার গুড়ো না খাওয়াই ভালো। তার কারণ সজনে পাতার গুড়া খেলে বা গ্রহণ করলে আপনার ব্লাড প্রেসার লেভেল আরো কমে যাবে যা আপনার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • সজনে পাতার গুড়তে প্রচুর পরিমাণ মিনারেলস ভিটামিনস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তাই খুব বেশি পরিমাণ সজনে পাতার গুঁড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার গ্রহণ করলে আমাদের খিদে কম হতে পারে এবং পেটে গ্যাস বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
  • সজনে পাতাতে কিছু প্লান্ট কেমিক্যাল থাকে যার জন্য সজনে পাতা একদম ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের খাওয়া উচিত না।
  • আমরা সজনে পাতা এবং সজনে ডাটা বা ড্রামস্টিক খেতে পারি, কিন্তু সজনে গাছের পাতা সংলগ্ন ডাল একদমই খাওয়া উচিত না, তার কারণ ওই ডালে কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে ক্ষতি করতে পারে।

 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : ডাবের জলের উপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি আশ্চর্যজনক তথ্য

বিশেষ দ্রষ্টব্য : সজনে পাতা গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার বা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেবেন।

 

 


Share With Your Friends

Leave a Comment