কলমি শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ৯ টি বিস্ময়কর তথ্য

Share With Your Friends

কলমি শাকের উপকারিতা

কলমি শাকের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত কলমি শাক খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়, এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়।

শুধু তাই নয় কলমি শাকের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আছে যা আমাদের যকৃত বা লিভার কে ডিটক্সিফিকেশন করতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের যকৃত সম্পর্কিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবুজ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। সেই সব শাকের মধ্যে আমাদের একটি অতি পরিচিত শাক হল কলমি শাক। এই শাক নানা পুষ্টি গুনে ভরপুর। এই শাক অত্যন্ত পরিচিত, সস্তা ও সহজলভ্য। 

যদিও কলমি শাকের উপকারিতা এবং কলমি শাকের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

 

কলমি শাকের উপকারিতা :

সাধারণত ভেজা মাটিতে, পুকুরের পাড়ে বা জলাশয়ের পাশে এই কলমি শাক হয়ে থাকে। তাই এই শাক আমরা খুব সহজেই খাদ্য রূপে পেয়ে থাকি এবং এর পুষ্টিগত গুনাগুলো অন্যান্য শাকের তুলনায় অনেক বেশি। 

১০০ গ্রাম কলমি শাকের পুষ্টিগুণ বা নিউট্রিশন ফ্যাক্ট, 

  • প্রোটিন ২.৬ গ্রাম
  • ফাইবার 2.1 গ্রাম
  • ফ্যাট ০.২ গ্রাম 

 

এছাড়াও পাওয়া যায় কিছু ভিটামিন যেরকম, 

  • ভিটামিন সি ৫৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি (থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)

এছাড়াও পাওয়া যায় কিছু মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেরকম, 

  • ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, সিলেনিয়াম ইত্যাদি। 

 

হৃদরোগের সম্ভাবনাকে কম করে : 

কলমি শাকের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যেরকম, ফেনোলিক্স এবং ফ্ল্যাভোনয়েড। এই ফ্ল্যাভোনয়েড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে আমাদের হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে দূর করতে। শুধু তাই নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল এর মাত্রা কে কম করতে, যার ফলে আমাদের হৃদয় সংলগ্ন কোষগুলি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমাদের হৃদয় অনেক সুস্থ থাকে। 

 

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে :

কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে, এবং এই ফাইবার আমাদের শরীরে হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং আমাদের পাচনতন্ত্রকে অনেক উন্নত করে। ফাইবার আমাদের পেটে মধ্যে থাকা গুডব্যাকটেরিয়া গুলির জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান, যা আমাদের শরীরে গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কলমি শাক গ্রহণ করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেক উন্নত হয় এবং আমাদের কন্সটিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

 

লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে :

কলমি শাকের মধ্যে কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যেগুলি আমাদের যকৃত বা লিভারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি সাহায্য করে আমাদের যকৃত কে ডিটক্সিফিকেশন করতে বা আমাদের যকৃতে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থ গুলির পরিমাণ কে কম করতে। যার ফলে আমাদের যকৃত বা লিভার সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা আমাদের যকৃত বা লিভারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কলমি শাকের ভূমিকা :

আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের মধ্যে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। কলমি শাকের মধ্যে কিছু ফাইটোকেমিক্যালস থাকে যা সাহায্য করে আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে। তাই নিয়মিত কলমি শাক খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের LDL ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং আমাদের শরীরে গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, ফলস্বরূপ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :

কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়। এই ভিটামিন গুলি সাহায্য করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে। তাই আমরা যদি নিয়মিত কলমি শাক গ্রহণ করি বা খাই তাহলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত হয় যার ফলে খুব সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কিত কারণে দ্রুত অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে :

কলমি শাকের উপকারিতা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শাকের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরে ফ্রী রেডিক্যাল কে কম করতে সাহায্য করে। যার ফলে ফ্রি রেডিক্যাল দ্বারা আমাদের শরীরে বিভিন্ন কোষ গুলি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্যান্সার কোষের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে কম করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কলমি শাক খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা ৯ টি তথ্য

 

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে :

বর্তমানে খুব ছোট বয়স থেকেই চোখে নানা ধরনের সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় আমাদের শরীরে যদি ভিটামিন এ এর ঘাটতি হয় তাহলে তার প্রভাব আমাদের দৃষ্টি শক্তিতে পড়ে। কলমি শাকের মধ্যে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যেরকম, জিক্সান্থিন এবং লুটেইন যা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়, যা আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করে এবং চোখ সম্পর্কিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কে অনেক কম করে। 

 

হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে :

একটি বয়সের পরে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়, যার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা বা যন্ত্রণা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কলমি শাক এর মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান যেরকম ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম ইত্যাদি, যা আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত এবং দৃঢ় করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কলমি শাক খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তবে একটি কথা আমাদের সব সময় মাথায় রাখা উচিত আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আমরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পেয়ে থাকি। 

 

ত্বক ও চুলের যত্নে কলমি শাকের ভূমিকা :

কলমি শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি সাহায্য করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে যার ফলে আমাদের চুল এবং ত্বকে ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কিত ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের ত্বকের উপরের মৃত কোষের স্তরকে কম করে নতুন কোষের সৃষ্টি করতে যার ফলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার থাকে। তাই কলমি শাকের উপকারিতা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও কলমি শাকের ক্যালোরি কম ও অনেক বেশি ফাইবার যুক্ত হওয়ায়, নিয়মিত কলমি শাক গ্রহণ করলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। 

অনেক মানুষের মধ্যেই অনিদ্রার সমস্যা দেখা যায়। রাতে কিছুতেই ঘুম আসে না। এই অতি সাধারণ শাক ঘুমের সমস্যার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

কলমি শাক আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতায় ভুক্তভোগী মানুষ এবং সন্তান সম্ভবা মায়েদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

 

কিভাবে ব্যবহার করবেন কলমি শাক ?

কলমি শাক পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে তারপর কুচি কুচি করে কেটে সেদ্ধ করে বা ভেজে ভাতের সাথে খাওয়া যায়। তবে অবশ্যই কম তেলে রান্না করলে ভালো। আর শাক খুব বেশি সময় ধরে রান্না না করাই ভালো খুব বেশি সময় ধরে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়াও সালাদ, ডাল, সুপ, সবজি, ভাজা ইত্যাদি বিভিন্নভাবে কলমি শাককে আমরা খেতে পারি।

আমরা চাইলে কলমি শাককে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফ্রিজের মধ্যে রাখতে পারি এয়ার টাইট কন্টেনার ব্যবহার করে ৪ থেকে ৫ দিনের জন্য। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ৮ টি তথ্য

 

কলমি শাক খাওয়ার অপকারিতা :

কলমি শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হওয়ার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। সেগুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত। কারণ কোন কিছুই অত্যাধিক পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত নয়। এর ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।

  • যাদের শরীরে নানা ধরনের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের একদমই কলমি শাক খাওয়া উচিত নয়। কারণ এর ফলে অ্যালার্জি সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  •  সব সব সময় কলমি শাক খাওয়ার পূর্বে একে পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া উচিত না হলে অপরিষ্কার কলমি শাকের জন্য আমাদের পেটে মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত নানান ধরনের ইনফেকশন এবং ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান পাওয়া যায় তাই যাদের কিডনি সম্পর্কিত কোন সমস্যা রয়েছে তাদের কলমি শাক খুব বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা উচিত না। যার ফলে পরবর্তীকালে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ইউরিক এসিডের সমস্যা থাকলে এই শাক গ্রহণ না করাই ভালো। যদিও এ বিষয়ে আরো অনেক সঠিক তথ্যের প্রয়োজন আছে। 
  • বর্তমানে কলমি শাক চাষ করা হয় এবং এর ফলন যাতে বেশি হয় তার জন্য এতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় ফলে কলমি শাকের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ গুলি বেশি পরিমাণে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকারক। তাই কলমি শাক ভালো করে ধুয়ে খাবার পর কোনপ্রকার অসুবিধা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এগুলি হলো কলমি শাকের কিছু ক্ষতিকর দিক। তবে যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার করে কলমি শাক খাদ্য রূপে আমরা প্রস্তুত করি তাহলে এই ক্ষতিকর দিকগুলো এড়ানো সম্ভব।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : কলমি শাক গ্রহণের পূর্বে বা কলমি শাক গ্রহণ করার পর যদি কোন রকম কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তবে অবশ্যই নিকটবর্তী কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

 


Share With Your Friends