কুমড়া খাওয়ার পর বীজ ফেলে দেন ? জেনে রাখুন কুমড়া বীজের উপকারিতা সম্পর্কে

Share With Your Friends

কুমড়া বীজের উপকারিতা

কুমড়া বীজের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, গুড ফ্যাট এবং প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান। তাই নিয়মিত কুমড়া বীজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

সাধারণত মিষ্টি কুমড়া আমরা সবজি রূপে নিয়মিত গ্রহণ করে থাকি কিন্তু কুমড়ার বীজকে সংগ্রহ না করে ফেলে দিই।কুমড়া খাবার পর কুমড়ার বীজকে আমাদের সংগ্রহ করে রাখা উচিত কারণ কুমড়া বীজের উপকারিতা এবং পুষ্টিগত গুনাগুন অনেক বেশি। 

 

কুমড়া বীজের উপকারিতা : 

কুমড়া বীজ খুব সহজেই এখন মার্কেট বা বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু এর মূল্য তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই আমরা কুমড়া থেকে বীজ কে সংগ্রহ করে ভালো করে ধুয়ে, রোদে শুকিয়ে উপরের খোসা বা আবরণ কে বাদ দিয়ে আমাদের খাদ্য রূপে ব্যবহার করতে পারি। ১০০ গ্রাম কুমড়া বীজের পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ভ্যালু, 

  • ক্যালোরি ৫৫৯, 
  • প্রোটিন ৩০ গ্রাম, 
  • ফ্যাট ৫৯ গ্রাম, 
  • কার্বোহাইড্রেট ১০.৭ গ্রাম, 
  • ফাইবার বা শর্করা ৬ গ্রাম, 

এছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদান যেরকম, 

ভিটামিন সি, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, সিলেনিয়াম ইত্যাদি। 

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে : 

কুমড়া বীজের মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা সাহায্য করে আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস ঘটিত সংক্রমণ বা ইনফেকশনের সাথে লড়াই করতে এবং আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে।

 

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে : 

কুমড়া বীজের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ ফাইবার বা শর্করা পাওয়া যায়। ফাইবার সাহায্য করে আমাদের রক্তে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে বৃদ্ধি করতে। যার ফল স্বরূপ আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ কুমড়া বীজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার বা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে : 

দৈনিক যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার বা শর্করা যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক বেশি উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তার কারণ ফাইবার বা শর্করা সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের অন্ত্রের মধ্যে গুড ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং এদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : প্রতিদিন ২ টি করে লবঙ্গ খেলে কমবে ৭ টি রোগ। লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

 

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের জন্য : 

অনেকেরই রাতের বেলা ঘুমের সমস্যা হয় অথবা সঠিক সময় ঘুম আসতে চায় না। তার কারণ আমাদের অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার এর ব্যবহার। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত কুমড়া বীজ খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম বা উন্নতমানের ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। তার কারণ কুমড়া বীজের মধ্যে ট্রিপটোফান নামক এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায় যা আমাদের ঘুমের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

 

হৃদয়ের জন্য বিশেষ উপকারী : 

কুমড়া বীজের মধ্যে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ কুমড়া বীজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের রক্ত চাপ এবং ব্যাড (LDL) কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

 

পুরুষদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ :

আমাদের দৈনন্দিন অনিয়মিত এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য পুরুষের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব বা ইনফার্টিলিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি নিয়মিত কুমড়া বীজ খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মধ্যে ওই রকম সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তার কারণ কুমড়া বীজের মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন ই এবং জিংক। এই দুইটি উপাদান সাহায্য করে পুরুষদের মধ্যে সক্রিয় শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে। 

 

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য : 

কুমড়া বীজের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। প্রতিদিন খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে, হৃদয় সম্পর্কিত রোগ হবার সম্ভাবনা কে কম করতে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং আমাদের শরীরের হাড়, মাংসপেশি এবং শারীরিক গঠনটি উন্নত করতে। 

এছাড়াও কুমড়া বীজের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস যা আমাদের শরীরে ক্রমাগত ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে কম করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করে যদিও এ বিষয়ে আরো অনেক তথ্য এবং পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। 

সম্পর্কিত প্রবন্ধ : দৈনিক দুপুর বেলা ১ টি করে এলাচ খেলে কি হয়? এলাচ খাওয়ার উপকারিতা

 

কুমড়া বীজের অপকারিতা :

আমরা যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ কুমড়া বীজ খাই বা গ্রহণ করি তাহলে কুমড়া বীজের খুব বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা অনেক কম, তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের জন্য ভালো নয়। 

  • কুমড়া বীজের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ফ্যাট থাকে তাই অতিরিক্ত পরিমাণ কুমড়া বীজ খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • কুমড়া বীজ এর মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং ফাইটো-কেমিক্যালস থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণ কুমড়া বীজ খেলে আমাদের পেটে ব্যথা, বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : যদি আপনার পূর্বে থেকে কোন শারীরিক সমস্যা থাকে যেরকম লো ব্লাড প্রেসার, লো ব্লাড সুগার তাহলে কুমড়া বীজ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। 

 

 


Share With Your Friends